ইতিহাস,ঐতিহ্য,সংগ্রাম,অর্জন এবং শেখ হাসিনা-

নিউজ ডেস্ক | bangalirkantho.com
আপডেট : ২৪ জুন, ২০২৩
Bangalir Kantha

ড.খন্দকার এ.হাফিজ
সদস্য,শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটি
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
সাবেক সহ সম্পাদক,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
সাধারন সম্পাদক,বঙ্গবন্ধু সেনা পরিষদ

৭৪ বছরে পা রাখল উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। “বঙ্গবন্ধু,আওয়ামী লীগ,বাংলাদেশ” ইতিহাসে এই তিনটি নাম একই সূত্রে গাথা।
আজ বাংলাদেশের গন মানুষের প্রিয় দল “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ” এর  শুভ জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা,ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

“জীবন দানের প্রতিজ্ঞালয়ে লক্ষ সেনানী তব পাছে
তোমার হুকুম তামিলের লাগি সাথে তব চলিয়াছে।
রাজভয় আর কারা শৃংখল হেলায় করেছ জয়,
ফাঁসির মঞ্চে মহত্ত্ব তব কখনো হয়নি ক্ষয়।
বাংলাদেশের মুকুটহীন তুমি প্রমর্ত রাজ
প্রতি বাঙালির হৃদয়ে তোমার তখত তাজ…। ”

বাঙালী জাতির মুক্তির মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গণতান্ত্রিকভাবে জন্ম নেয়া উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ ৭৩ বছরে পা রাখলো। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার বিখ্যাত রোজ গার্ডেনে জন্ম হয়েছিল এই প্রাচীন রাজনৈতিক দলটির।
এই দলের জন্মলাভের মধ্য দিয়েই রোপিত হয়েছিল বাঙালীর হাজারও বছরের লালিত স্বপ্ন স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ। জন্মলগ্ন থেকেই দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি দলটির নেতাকর্মীদের অঙ্গীকার ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালী জাতির গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের ইতিহাস।জনগণের অকুণ্ঠ ভালবাসা ও সমর্থন নিয়েই এই দলটি বিকশিত হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ মানেই বাঙালী জাতীয়তাবাদের মূল ধারা। অতীতের মতো বাংলাদেশের ভবিষ্যতও আওয়ামী লীগের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পৃক্ত। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির ভূখণ্ডের সীমানা পেরিয়ে এই উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ এবং জনসমর্থনপুষ্ট অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, মানব কল্যাণমূখী রাজনৈতিক দল হিসাবে নিজেদের পরিচিতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে প্রাচীন এই দলটি।বাঙালীর ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা, বাঙালীর আত্মনিয়ন্ত্রণ, স্বায়ত্তশাসন সর্বশেষ স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগ তার আদর্শ এবং উদ্দেশ্যে অটল থেকেও সময়ের বিবর্তনে বৈজ্ঞানিক কর্মসূচীর মাধ্যমে একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে আজ সূপ্রতিষ্ঠিত। এই দলের নেতাকর্মীদের ত্যাগ তিতিক্ষা ও অঙ্গীকারদীপ্ত সংগ্রামী ভূমিকা আজ একটি ইতিহাস।

রোজ গার্ডেনে দলটি প্রতিষ্ঠালাভ করেছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে। ১৯৫৬ সালে ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত দলীয় কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ” নামকরণের মাধ্যমে দলটি অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়। এক কথায় বলতে গেলে, বাঙালী জাতির সকল মহতী অর্জনের নেতৃত্বে ছিল জনগণের প্রাণপ্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগ,যার মহানায়ক ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

দীর্ঘ রাজনৈতিক পথপরিক্রমায় অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎরাই ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দলটি আজ এ দেশের গণমানুষের ভাব ভাবনার ধারক বাহকে পরিণত হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক ভাব-ধারার আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে দলটি। জন্মের পর থেকে অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী দলটি বেঁচে আছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসাবে।
তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে বারবার আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায়।জাতির  পিতা বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন মহামূল্যবান স্বাধীনতা।আজ তাঁরই কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বারম্বার ভূমিধ্বস বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের জন্মলাভের পর মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু  করে ‘৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ‘৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয়দফা, ‘৬৯ সালের গণঅভু্যত্থান এবং ‘৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে এই দলের নেতৃত্বে বাঙালী জাতি ক্রমশ এগিয়ে যায় স্বাধীনতার দিকে।এই দলের নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ নিজেদের স্থান দখল করে। আর এসব আন্দোলনের পুরোধা ও একচ্ছত্র নায়ক ছিলেন ইতিহাসের মহানায়ক আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কে স্বপরিবারে হত্যার মাধ্যমে যে দুর্ভাগ্যজনক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয় তার পর দীর্ঘ ২১ বছর ক্ষমতার বাহিরে রাখা হয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে।বাংলাদেশের আপামর জনসাধারনের আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করেছিল।এর আগে এই দলের আন্দোলন সংগ্রামেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সংসদীয় গণতন্ত্র এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা।তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান অনুযায়ী পূর্ণ মেয়াদ শেষে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ।২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অনুষ্ঠিত প্রহসনের নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিরোধী দলে অবস্থানকালে আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি ধ্বংস,নিশ্চিহ্ন ও নেতৃত্বশূন্য করতে নেওয়া হয় এক মাস্টার প্লান।একের পর এক ঘটতে থাকে শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগ এর নেতা কর্মীদের উপর সহিংস হামলা।২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষস্থানীয় সকল নেতা অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেও ঝরে যায় অসংখ্য তাজা প্রাণ।এরপর কূখ্যাত ওয়ান ইলেভেনের সময় আবারও ঝড় আসে আওয়ামী লীগের ওপরেই।
শত চেষ্টা করে দীর্ঘ ১১ মাস কারাপ্রকোষ্ঠে বন্দী রেখেও বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে পারেনি ওয়ান ইলেভেন এর কুশীলবরা।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের জনগণের রায় নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বে তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
২০১৪ এর দশম এবং ২০১৮ এর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও গতানুগতিক ভাবে বাংলাদেশের মানুষের ভালবাসার এক অনন্য ইতিহাস রচনা করে লাগাতার বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দূর্বার গতিতে ছুটে চলছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের অভিষ্ঠ লক্ষ্যে।