logo

শিরোনাম

কলাগাছের আঁশ থেকে স্যানিটারি প্যাড?

Bangalir Kantha
প্রতিবেদন প্রকাশ: ০২ এপ্রিল, ২০২৩ | সময়ঃ ০১:৫১
photo
...

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) মেকাট্রনিকস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়েন আসিফ আলম। একবার বান্দরবানে ঘুরতে গিয়ে লক্ষ্য করলেন, একবার ফল দেওয়ার পরই কলাগাছ কেটে ফেলা হয়। এই কাটা গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার উপযোগী না হওয়ায় স্থানীয় ব্যক্তিদের জন্য একটা বোঝা। আসিফ ভাবছিলেন, এই কেটে ফেলা কলাগাছকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়। সেখান থেকেই ‘ব্যানানা প্যাড’ তৈরির ভাবনাটা তাঁর মাথায় আসে। এটি একধরনের স্যানিটারি প্যাড।

পাহাড়ের নারীদের কাছে স্যানিটারি প্যাড সহজলভ্য নয়। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্প মূল্যে ও সহজে ব্যবহার উপযোগী স্যানিটারি প্যাড তৈরি করতে চেয়েছেন আসিফ। তরল শুষে নেওয়ার উপযোগী চিপ লাগিয়ে প্যাড বানানোর চেষ্টা সফলও হয়। কিন্তু দেখা যায় দাম বেশি হয়ে যাচ্ছে, স্বাস্থ্য ঝুঁকিও থাকছে।

এরপর অন্য উপায়ে চেষ্টা করেন। আসিফ বলেন, ‘সাধারণ কাপড়ের চেয়ে কলাগাছের আঁশের শোষণ ক্ষমতা বেশি। কিন্তু আঁশ বের করে আনতে হলে কয়েকটি ধাপ পেরোতে হয়। প্রথমটি হলো গাছের ভেতরের প্রায় ৯০ ভাগ পানির নিষ্কাশন। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দরকার বিশেষ ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্র (মোটর)৷ কিন্তু তাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তাই আমি পাহাড়ি ঝরনার পানিপ্রবাহ ব্যবহার করে, টারবাইন কাজে লাগিয়ে আঁশ তৈরির একটা ধারণা দাঁড় করিয়েছি। এতে বিদ্যুৎ বাঁচবে, ফলে খরচও কম হবে।’

আসিফ জানান, কলাগাছের আঁশ নিয়ে আগেও কাজ হয়েছে। কিন্তু তিনি মূলত এর শোষণ ক্ষমতা বাড়ানো নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর দাবি, কাপড়ের চেয়ে ত্রিশ গুণ বেশি শোষণ করতে পারে কলাগাছ থেকে তৈরি স্যানিটারি প্যাড। এ ছাড়া বর্তমানে বাজারে যেসব প্যাড পাওয়া যায়, সেগুলো সুগন্ধিযুক্ত করতে কখনো কখনো ডাইঅক্সিন নামের একটি ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা ক্যানসারের মতো গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে। আসিফ তাই রাসায়নিকমুক্ত প্যাড তৈরি করতে চেয়েছেন। আরও একটি বিষয় মাথায় ছিল তাঁর। আসিফ বলেন, ‘স্যানিটারি প্যাড পুনর্ব্যবহার করা যায় না। ফলে প্লাস্টিক বর্জ্য ও পলিএস্টার বাড়ছে, এটাও একটা ক্ষতিকর দিক। কিন্তু ব্যানানা প্যাড একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় পরিশোধন করলে আবার ব্যবহার করা যাবে। যেহেতু পলিএস্টার ব্যবহার করা হচ্ছে না, তাই এটি জীবাণুমুক্তও হবে।’ আসিফ জানান, ব্যানানা প্যাড বাজারে আনার জন্য এরই মধ্যে তিনি বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের (বিআরআইসিএম) সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

চুয়েটের এই শিক্ষার্থীর প্রকল্পটি একাধিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতেছে। সম্প্রতি আইইইই বাংলাদেশ আয়োজিত স্নাতক প্রকল্প বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ‘ব্যানানা প্যাড’। ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটি আয়োজিত ‘ইঞ্জিনিয়ারিং ডে ২০২২’-এর প্রজেক্ট প্রেজেন্টেশন কম্পিটিশনেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এ ছাড়া পেয়েছে ইউনাইটেড ন্যাশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাকস চ্যালেঞ্জ ২০২২-এর মূল পর্বে অন্যতম সেরা স্টার্টআপের খেতাব। আসিফ মনে করছেন, প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি ওই অঞ্চলে তৈরি হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। বড় কোনো প্রতিষ্ঠান সহায়তা করলে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে ব্যানানা প্যাড।

  • নিউজ ভিউ 1719