logo

শিরোনাম

মুন্সীগঞ্জে ১০ টাকায় ইফতার বাজার

Bangalir Kantha
প্রতিবেদন প্রকাশ: ০১ এপ্রিল, ২০২৩ | সময়ঃ ০২:১৬
photo
...

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ 'রমজানের আগেরদিন এক বাড়ি থেকে কিছু ইফতার সামগ্রী পেয়েছিলাম। মেয়ের নতুন বিয়ে হয়েছে তার শ্বশুর বাড়িতে ইফতার না দিলে মেয়ে ছোট হবে। পরে সেই ইফতার এবং আরো এক হাজার টাকা ঋণ করে ছোট মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে ইফতার সামগ্রী দিয়ে এসেছি। তারপর থেকে প্রতিটি রোজায় শুধু পানি আর মুড়ি দিয়ে ইফতার করেছি। এখানে ১০ টাকায় ইফতার পেয়ে বাকি রমজানগুলো ভালো কাটবে। বাজারের ১০ টাকার একটি ব্যাগের দামে সাত প্রকার ইফতার সামগ্রী পেয়েছেন বলে জানান, পূর্বরাখি গ্রামের আয়শা বেগম (৪৫)। '

 

শুধু আয়শা নয় তাঁর মতো একই হাল লুৎফা বেগম, লাবনি আক্তার, রোকসনা বেগম, খোদেজা বেগম সহ অনেকের।

 

এদিকে রমজান মাসে ঘিরে ইফতার সামগ্রীর দাম যখন ঊর্ধ্বগতি, তখন নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো ১০ টাকায় ইফতার সামগ্রী দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিক্রমপুর মানব সেবা ফাউন্ডেশন। এরআগে ১০ টাকায় গরুর মাংস ও ইফতার বাজার দিয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় আসে এ সংগঠনটি।

 

গতকাল শুক্রবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া বাজারে ‘১০ টাকায় ইফতার বাজার’ নামক এক ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালন করা হয়। অস্থায়ী এই বাজার থেকে ১০ টাকার বিনিময়ে এক কেজি তেল, খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, চিড়া ও মুড়িসহ ইফতারে ৭টি পণ্য কিনে নেন নিম্ন আয়ের ২১০টি পরিবার। এমন আয়োজনে অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষের মুখে তৃপ্তির হাসি ফোটে।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, অস্থায়ী এই বাজারের ভিন্ন ভিন্ন স্টলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তেল, খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, চিড়া ও মুড়ি। অন্য সব বাজারের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ পছন্দমতো পণ্য সংগ্রহ করছেন। তবে সেগুলোর দাম রাখা হচ্ছে মাত্র ১০ টাকা।

 

রাউৎভোগ এলাকার রোকসানা বেগম (৬০) বলেন, ‘পাশের বাড়ির একজন ছোলা-মুড়ি দিছিল। পাঁচ রোজায় সব শেষ হয়ে গেছে। পরে আর কিনে খাইতে পারি নাই। এহন ১০ টাকা দিয়া কত কিছু কিনে নিলাম। যা দিয়া বাকি রমজানগুলো কাটিয়ে দিতে পারমু।’

 

দিঘীরপাড় গ্রামের নাছিমা বেগম (৩৫) বলেন, ‘বাজারে যেখানে ১ লিটার তেলের দাম ১৯০ টাকা; সেখানে ৭টি পণ্য মাত্র ১০ টাকায় পেয়েছি। এখানে এসে মনে হলো বাপ-দাদার আমলের অল্প টাকায় আমরা বাজার থেকেই পণ্য নিচ্ছি। রোজার বাকি দিনগুলো ভালোভাবে কাটবে।'

 

সংগঠনে সদস্য রিয়া মনি বলেন, ‘ গত বছরের মতো এ বছরও আমরা ১০ টাকায় ইফতার বাজারের আয়োজন করেছি। এ বাজার থেকে নিম্নবিত্ত ২১০টি পরিবার বাজার করেন। তিনি আরও বলেন, আমরা চাইলে ইফতারসামগ্রীগুলো বিনা মূল্যে তাদের দেওয়া যেত। তবে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা চান, তাঁরা সামান্য মূল্যে ক্রয় করুক। এতে তাঁদের আত্মসম্মান অক্ষুণ্ন থাকবে। পাশাপাশি বাজার থেকে ক্রয় করার মতো একটি অনুভূতি লাভ করবেন।’

 

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াদ হোসাইন বলেন, বর্তমান বাজারের অবস্থা বিবেচনা করে আমরা এই অস্থায়ী বাজারের আয়োজন করেছি। সংগঠনের সদস্যদের দান ও মাসিক চাঁদা দিয়ে বাজার পরিচালনা করা হচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনা আরও বড় ছিল। তবে আর্থিক সংকটের কারণে কিছুটা সীমিত পরিসরে করা হচ্ছে। এই কাজটি দেখে যাতে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয় ও এগিয়ে আসে, সেটিই আমাদের এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য।’

 

 

সংগঠনের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক হিরা বলেন, 'দ্বিতীয় বারের মতো এই বাজার থেকে দুই শতাধিক মানুষ সহায়তা পেয়েছেন। আমরা অসহায় মানুষের আগ্রহ ও তৃপ্তির হাসি দেখে আনন্দিত হয়েছি।'

  • নিউজ ভিউ 1701