ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে ভুয়া বিল-ভাউচার পাঠিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তার কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল এক প্রতারক চক্র। ওই চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (দক্ষিণ)। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম কোরবান আলী সিকদার। এসময় তার কাছ থেকে ৩টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
ডিবি জানায়, জনতা ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেন কোরবান আলী সিকদার। গতকাল ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিন) বিভাগের এডিসি সাইফুর রহমান আজাদ এতথ্য জানান।
তিনি বলেন, শ্যামপুর থানায় দায়ের করা মামলা তদন্তকালে কুষ্টিয়া জেলায় অভিযান চালিয়ে কোরবানকে গ্রেপ্তার করা হয়। কোরবান সিসি ক্যামেরা সার্ভিসিংয়ের নকল ভাউচার বিল ব্যাংকের অফিসিয়াল মেইলে পাঠিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের অন্যতম হোতা।
(এডিসি) সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, গ্রেপ্তার কোরবান আলী সিকদার ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার ই-মেইল আইডি, টেলিফোন নম্বর ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করতেন। পরে স্মার্ট সলিউশন নামক প্রতিষ্ঠানের প্যাড ব্যবহার করে তাতে বিভিন্ন ব্যাংকের বার্ষিক সিসি ক্যামেরা সার্ভিসিং এবং প্রিন্টারের টোনার সরবরাহ বাবদ নকল বিল-ভাউচার তৈরি করতেন। এরপর সেগুলো ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার অফিসিয়াল ই-মেইল আইডিতে মেইল করতেন।
তিনি আরো বলেন, ই-মেইল পাঠানোর পর আসামি নিজেই ব্যাংকের ম্যানেজারের সঙ্গে বিভিন্ন আইপি ফোনের নম্বর থেকে ফোন দিয়ে বিল পাঠানোর বিষয়ে তাগাদা দিতেন। বার্ষিক সিসি ক্যামেরা সার্ভিসিং ও প্রিন্টারের টোনার সরবরাহের বিল-ভাউচারের মেইল দেওয়ার কথা বলে তা দ্রুত পরিশোধের জন্য অনুরোধ জানাতেন কোরবান।
ব্যাংকের ম্যানেজারের বিশ্বাস অর্জনের জন্য ব্যাংক ম্যানেজারের ল্যান্ড ফোনে বিভিন্ন নম্বর থেকে কল করতেন কোরবান। এমনকি ব্যাংকের হেড অফিসের এজিএম পরিচয় দিয়ে নগদ/বিকাশ/রকেটে (ভাউচারে বর্ণিত পেমেন্ট নম্বরে) বিলটি দ্রুত পরিশোধের জন্য নির্দেশও দিতেন। এরপর কোরবান এজিএমের পরিচয় দিয়ে ল্যান্ডফোনে বিভিন্ন নম্বর থেকে কল করে বিলটি ব্যাংকের কোন খাত থেকে কীভাবে পরিশোধ করতে হবে সে বিষয়ে বিশদ বর্ণনা করে নিট পেমেন্ট দ্রুত পরিশোধের জন্য বলতেন। এতবার কল পেয়ে ব্যাংকের ম্যানেজার বিষয়টি বিশ্বাস করে চাহিদার সমপরিমাণ টাকা আসামির দেওয়া নগদ/বিকাশ/রকেটে (ভাউচারে বর্ণিত পেমেন্ট নম্বরে) বিলটি পরিশোধ করতেন।
এভাবে টাকা পাঠিয়ে দিয়ে জনতা ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা প্রতারিত হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের তথ্যের ভিত্তিতে লেনদেনের আগে তথ্যের সত্যতা যাচাই করে নিতে হবে। যে কোনো আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকতে হবে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কেউ প্রতারিত হলে (বিশেষ করে ব্যাংকের ক্ষেত্রে) দ্রুত পুলিশের সহায়তা নিতে অনুরোধ করেন তিনি।