গাজীপুর শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া দক্ষিণখন্ড গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ‘মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স’-এ এবারও ফুটেছে শীতের দেশের টিউলিপ। তিনবার টিউলিপ ফোটানোর গবেষণা ও সফলতার পর এটি দেলোয়ার-সেলিনা দম্পতির চতুর্থবারের বাণিজ্যিক সফলতা। কৃত্রিম উপায়ে ছাদ ও প্রাচীর তৈরি করে তাপমাত্রা কমিয়ে বিদেশি ফুল টিউলিপ ফোটানোর সফলতা এসেছে।
প্রথম বছর ১ হাজার একশ বাল্ব (বীজ হিসেবে ব্যহৃত কান্ড) পরের বছর ২০ হাজার এবং এর পরের বছর ২৩ হাজার বাল্ব রোপণ করে শতভাগ ফুল ফোটাতে সক্ষম হয়েছেন ওই চাষী দম্পতি। গবেষণালব্ধ ১৩টি রঙের মধ্যে ৫টি রঙের ফুল তার বাগানে বাতাসে দোল খাচ্ছে। এরমধ্যে সাদা, লাল, গোলাপী, হলুদ, হলুদ-খয়েরী সংমিশ্রণ উল্লেখযোগ্য। তারা এ চাষ ছড়িয়ে দিয়েছেন দেশের উত্তরাঞ্চলের আরও আটটি এলাকায়। দেশের মোট ১৪টি স্থানে এ বছর টিাউলিপ ফুটেছে। সারি সারি বাহারি রঙের ফুল দেখতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শণার্থীরা তার বাগানে ভিড় করছেন। দর্শনার্থীদের কাছ থেকে প্রবেশমূল্য হিসেবে ১০০ করে টাকাও নিচ্ছেন।
টিউলিপ চাষের বিষয়ে দেলোয়ার বলেন, ‘আমরা এ নিয়ে চারবার টিউলিপ ফুলের চাষ করলাম। গত বছর ৭০ হাজার বাল্ব ছিল। এবার দুই লাখ। বাংলাদেশের ১৪টি স্থানে এবার টিউলিপের চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে পঞ্চগড়ে বড় একটা চাষ হচ্ছে। সেটি দুটি এনজিওর সহায়তায় ২০ জন নারী উদ্যোক্তার মাধ্যমে ট্যুরিজম এলাকায় করা হয়েছে। আমাদের এখানে প্রায় ৬৫ হাজার বাল্ব আছে। আমরা ফুল ফুটিয়ে বাজারে বিক্রি করছি। ভালো সাড়াও পাচ্ছি। আমাদের এখান থেকে স্থানীয় ফুল বিক্রেতারা ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ এক হাজার, দেড় হাজার এবং দুই হাজার টাকার ফুল কিনে নিয়ে বিক্রি করছে। আমরা পট প্ল্যানও বিক্রি করছি। অন্যান্য বছরের চেয়ে ভালো বাণিজ্যিক সাড়া পাচ্ছি। টিউলিপ চাষ বাংলাদেশের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জের। এ বছর শীত কম হওয়ায় ফুল আগেই ফুটে গেছে। ফুলের লাইট কমে গেছে। এগুলো আমাদের সমস্যা। আরেকটা সমস্যা হলো-আমাদের ভ্যাট ট্যাক্স একটু বেশি। নেদারল্যান্ডস থেকে বিভিন্ন ধরনের বাল্ব আমদানি করি, সেখানে ভ্যাট ট্যাক্সের পরিমাণ বেশি। এটা কম হলে আগামীতে এই ব্যবসাকে আরও প্রসার করতে পারতাম এবং ফুলের খরচ কমতো। আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারতাম। আরও অনেকে চাষ করে লাভবান হতো। বাল্ব না হলে আমরা উৎপাদন করতে পারব না। কারণ, কালটিভেশনের টাইম বা টেম্পারেচার একটা বিরাট ফ্যাক্ট। ২০ দিনের টেম্পারেচার যদি ২০ ডিগ্রির নিচে থাকতো, রাতের টেম্পারেচার যদি ১১ ডিগ্রির নিচে থাকতো তাহলে এ বাল্ব আমরা দ্বিতীয়বার ব্যবহার করতে পারতাম। যেহেতু আমাদের টেম্পারেচার বেশি সেক্ষেত্রে বাল্বের গুণগত মান থাকবে না। বাল্ব স্টোরেজ করা অনেক কঠিন বিষয়। এ ধরনের স্টোরেজ বাংলাদেশে নাই এবং আমাদের কৃষকদের পক্ষে এ ধরনের স্টোরেজ করা সম্ভব না। এটা অনেক ব্যয়বহুল। একটা স্টোর করতে প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা লাগবে। পাইকাররা প্রতি ফুল ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছে। আমরা তাদের কাছে প্রতি ফুলের দাম নিচ্ছি ৭০ থেকে ৮০ টাকা।’
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা শিরিন আক্তার ঢাকা থেকে টিউলিপের বাগান দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘ফুল সবারই প্রিয়। গোলাপের পাশাপাশি যদি এ ফুলের চাষ করা হয় এবং বাগান সবার জন্য উম্মুক্ত করা হয় তাহলে মানুষ আরও আগ্রহ পাবে।’